বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্যের ইতিহাস
( Marks=5×1)
* বাঙালি চিত্রকলা চর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা কর ?
উঃ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘাতুপুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন । অবনীন্দ্রনাথ পাশ্চাত্য রীতি অনুসরণে ইটালিয়ান ডিলারডি এবং ইংরেজ শিল্পী পামারের কাছে প্যাস্টেল , জল রং , তেল রং এবং প্রতিকৃতি অঙ্কন শেখেন কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তিনি ভারতীয় চিত্রাংকন রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা শুরু করেন ।
ভারতীয় রীতিতে আকাতার প্রথম দিকের বর্জ্য মুকুট , ঋতুসংহার , বুদ্ধ , সুজাতা কৃষ্ণলীলা প্রভৃতি বিষয়ক ছবিতেও ভারতীয় আ্মিক এর অনুকরণ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় । ১৮ ৯৮ খ্রিস্টাব্দে হ্যাবেল সাহেবের আগ্রহে অবনীন্দ্রনাথ কলকাতার আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ হন ।
তিনি জাপানি শিল্পী টাইকানের কাছে জাপানি অঙ্কন নীতি শিক্ষা করেন যার প্রভাব অমর খৈয়াম চিত্রাবলীতে দেখা যায় । শিক্ষক রূপে সারা ভারতে ভারতীয় চিত্রাংকন রীতি পুনরুদ্ধারের যে ব্যাপক আন্দোলন অবনীন্দ্রনাথ শুরু করেন তার মাধ্যমে ভারতীয় শিল্প নবজন্ম লাভ করে । শেষ জীবনে তিনি কাটুম কুটুম নামে বিখ্যাত আকারনিষ্ঠ বিমুর্তরূপ সৃষ্টি করেন। ভাগিনী নিবেদিতা , হ্যাভেল প্রমুখের উদ্যোগে অবনীন্দ্রনাথের শিল্প আদর্শ জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ' ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি ' স্থাপিত হয় । ভারত ছাড়াও লন্ডনে , প্যারিসে ও জাপানে তার ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ।
তার আগা বিখ্যাত কিছু ছবির নাম — শাহজাদপুর , দৃশ্য বলি , শাজাহান প্রভৃতি । এছাড়াও তিনি বহু মুখোশের পরিকল্পনাও রচনা করেছিলেন ।
* বাঙালির চিত্রকলা চর্চার ধারায় যামিনী রায়ের ভূমিকা কতখানি তা বুঝিয়ে দাও ?
উঃ) বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী যামিনী রায় ।
গ্রামে মাটির মূর্তি শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েই তার শিল্পী জীবনের সূচনা হয়। গভারমেন্ট আর্ট স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি ফাইন আর্ট বিভাগে ইউরোপীয় একাডেমিক রীতির চিত্রবিদ্যা সেকেন । ১৯১৮ থেকে ১৯ তার ছবি ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ ফাইন আর্টের পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে । গ্রাম বাংলার আদিবাসী জীবন ও জীবিকা , ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম কাহিনী নির্ভর ছবি আর পট চিত্র অঙ্কনে তিনি ছিলেন অনবদ্য ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তার ছবি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে ভাইসরয়ের স্বর্ণপদক লাভ করে । ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ' পদ্মভূষণ ' উপাধিতে ভূষিত হন আর্ট স্কুলে গিলার্ডি সাহেবের কাছে তেল রঙে আঁকায় অভ্রান্ত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে যামিনী রায় জলরঙে অসামান্য সব ছবি এঁকেছেন। কালীঘাটের পাটুয়াদের শৈলির দ্বারা তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হন ।
ফরাসি চিত্র ধারার মধ্যে যারা সরল রেখার পরিবর্তে ছবিতে কার্ড ব্যবহার করেন তাদের চিত্রকলা তাকে অনুপ্রাণিত করে । ছবি আঁকার ক্ষেত্রে তার মূল লক্ষ্যটিকে তিনি নিজেই নির্দিষ্ট করেছেন , তা যেন অন্য সকলের ছবি থেকে আলাদা হয় তা সে ভালই হোক বা মন্দই হোক । পরবর্তী শিল্পীদের অনেককেই তার দেখানো পথে নিজের নিজের চিত্র ভাষা করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন ।
Post a Comment