অতীত কল্পনা : পৌরাণিক কাহিনী , কিংবদন্তি , লোক কথা , স্তৃতি কথা এবং মৌখিক ঐতিহ্য ( imaging the past : myths , legends , folktales , memory and oral tradityones )
উঃ) আদিম যুগে শিকারি , খাদ্য সংগ্রাহক ও পশু পালন মানুষের জীবনে নিরাপত্তার অভাব ও ব্যস্ততা ছিল অনেক বেশি। পরবর্তীকালে কৃষি সভ্যতার উন্মোস ঘটলে মানুষ অবসরযাপনের কিছুটা সময় লাভ করে ।
এই অবসর যাপনের সময় মানুষ স্ততমূর্তভাবে সৃষ্টির প্রেরণায় বিভিন্ন জনশ্রুতির কাহিনী সৃষ্টি করে । কিসি জিবি গ্রাম সমাজের প্রথম জনশ্রুতির সৃষ্টি হয় বলে সাংস্কৃতিক নিবিজ্ঞানী গণ জানিয়েছেন । আদিম গ্রাম সমাজে একান্নবর্তী কৃষক পরিবারে নারী অর্থাত ঠাকুরমা দিদিমা পিসিমা মাসিমা প্রমুখ তাদের নাতি নাতনি শিশু কিশোর কিশোরীকে বিভিন্ন জনশ্রুতির কাহিনীগুলি গল্পাকারে শোনাতেন । এভাবে অতীতের জন্য স্মৃতির কাহিনী গুলি বংশ পরস্পরায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চলে আসে ।
কিশোর বয়সে স্যার ওয়াল্টার রেলে ও তার ভাই সমুদ্রের গল্প শুনছেন |
১) পুরাণের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা : কুরআনের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যায় বলা হয় যে , পুরান হল সাংস্কৃতিক সাহিত্য বা গল্প গাঁথা । কোন সমাজে প্রাচীনকাালে কি ঘটেছিল তাই পুরানেে প্রকাশ পায়। কুরআনের প্রাচীনতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে কোন সংশয় নেই । পুরান যেহেতু লিখিত সাহিত্য নয় , তাই এর প্রাচিনত্ত সম্পর্কে কোন সঠিক ও যথার্থ সাক্ষ্যয প্রমাণ নেই।
২) পশু কথা : সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেছেন যে , পৌরাণিক কাহিনীগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন সৃষ্টি হল বিভিন্ন পশু কথা । পুরাণের পশু কথাগুলিতে পশুপাখিরাই প্রধান চরিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তাদের ঘিরে পুরাণের লৌকিক কাহিনী গড়ে ওঠে । কচু পাতার পশু পাখিগুলি আচার-আচরণে পশুপাখি নয় , এরা মানব চরিত্রের মতোই আচরণ করে । বিভিন্ন দেশের পুরানে বর্ণিত বিভিন্ন পশু-পাখি দেবতা হিসেবে ও পূজিত হন ।
৩) রূপকথা : পৌরাণিক কাহিনীর অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যময় বিষয় হলো রূপকথা । প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য মহাভারত এবং প্রাচীন গ্রিসের মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসিতে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন পৌরাণিক রূপকথার উল্লেখ পাওয়া যায়। অধিকাংশ রূপকথার চরিত্রেই কোন নাম থাকে না । 'এক যে ছিল রাজা , তার ছিল দুই রানী ও দুই পুত্র ' — এইরূপ নামহীন ব্যক্তিরাই রূপকথার প্রধান চরিত্র । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , রূপকথা গুলি সর্বদা মেলনাত্মক হয় ।
৪) পুরান ধর্মতত্ত্ব : অধিকাংশ পূরণে আমাদের নিজস্ব জগতের পাশাপাশি অবস্থিত অপর একটি জগতের কথা বলে যা আমাদের কাছে অদৃশ্য ।
এই অদৃশ্য যাবত আমাদের মর্তজগতের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী , কেননা তা দেবতাদের পৃথিবী বলে বিশ্বাস করা হয় । আধুনিক বিজ্ঞান নির্ভর মানব সমাজেও পুরান ধর্ম তত্ত্বের এতটাই ক্ষমতা যে , মানুষের সামাজিক প্রতিষ্ঠান , আচার অনুষ্ঠান প্রভৃতির ক্ষেত্রে পৌরাণিক কাহিনীর গভীর প্রভাব রয়েছে । বাংলার পৌরাণিক কাহিনী গুলির মধ্যে অন্যতম হলো চাঁদ সওদাগর ও বেহুলা লক্ষিন্দর এর কাহিনী । বাঙালির সমাজ জীবনে বর্তমানকালেও এই কাহিনীর গুরুত্ব অনস্কিকার্য।
* বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনী : প্রাচীনকালের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে অসংখ্য পৌরাণিক কাহিনীর উল্লেখ পাওয়া যায় ।
১) বাইবেলের পৌরাণিক কাহিনী : খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে প্রবল বন্যায় পৃথিবীর স্থলভাগ ডুবে গেলে বিভিন্ন প্রাণীর একজোড়া করে প্রতিনিধি নেওয়ার নৌকায় আশ্রয় নেয় । এই প্রাণীদের থেকেই পরে আবার পৃথিবীতে জীবজগতের প্রচার ঘটে ।
২) হিন্দু পুরাণের কাহিনী : প্রাচীন হিন্দু কোরআনের একটি জনপ্রিয় কাহিনী হল মহাকবি কালিদাসের কাহিনী । প্রথম জীবনে মূর্খ কালিদাস গাছের ডালে বসে সেই ডালের গোড়া কাটছিলেন । পরবর্তীকালে দেবী সরস্বতীর বর পেয়ে তিনি মহাকবি হন এবং সংস্কৃত ভাষায় অসাধারণ কয়েকটি কাব্য রচনা করেন ।
৩) গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনী : প্রাচীনগ্রিক সাহিত্যিক স্কাইলস , সাপোর্ট প্লিজ , ইউ রিপিডিস প্ররমো পৌরাণিক কাহিনী থেকে তাদের লেখার সূত্রর গ্রহণ করেছেন । গ্রিক পুরান থেকে প্রাচীন গ্রীকদের নিজস্ব সংস্কৃতি , প্রথাাাা ওর রীতিনীতি জানা যায় । বিগত দুই শতাব্দীতে মাইসিন ও ম্যানুয়াল সভ্যতার আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন গ্রীকের বহু দেবতা ও যোদ্ধাদের পৌরাণিক কাহিনী ও হোমারেের ইলিয়াড ও ওডিিসি মহাকাব্য উল্লেখিিিত বহু ঘটনা সভ্যতা প্রমাণিত হয় ।
ক্রেনাস ও তার পুত্র দেব রাজ জিউস এর কাহিনী প্রাচীন গ্রীকস পৌরাণিক কাহিনী অন্যতম উদাহরণ । ক্রেনাস তার পিতাকে খোঁজা করে দেবতাদের রাজা হন এবং বোন রেহাকে বিবাহ করেন । ক্রেনাসের মনে হয়, তার সন্তান ও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে । তাই রে হওয়ার জন্ম দেওয়া প্রতিটি সন্তানকে ক্রেনাস ভক্ষণ করতেন । রেhua জিন্সের জন্ম দিয়ে তাকে লুকিয়ে নবজাতকের কথায় একটি পাথর মড়িয়ে ক্রেন আজকে ধোঁকা দেয় । পরবর্তীকালে জিউস বড় হয়ে তার পিতাকে একটি ঔষধি পানীয় খাওয়ালে জিন্সের সকল ঘাতাকে ক্রেনাস উগড়ে দেন । এরপর ক্রেনাস কে যুদ্ধে হারিয়ে জিওস দেবরাজন।
৪) রোমের পৌরাণিক কাহিনী : প্রাচীন রোমারগন তাদের পূর্বতন গ্রিক সভ্যতার পৌরাণিক কাহিনীগুলি উত্তর আধিকার সূত্রে লাভ করেন । রোমের পৌরাণিক কাহিনীগুলি মূলত রমুলাসের জীবন কাহিনী , রোম নগরীীও রোমাাান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ও তাদের ধর্মে বিভিন্ন দেবতা সম্পর্কে আলোচনা করে ।
* ইতিহাসের পৌরাণিক কাহিনীর গুরুত্ব :
উঃ) প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনীগুলির কতটা বিষয় বস্তু ঐতিহাসিকভাবে ঠিক বা ভুল , অর্থাৎ সত্য বা মিথ্যা , তা যাচাই করা খুবই কঠিন কাজ । আজকাল বহু ক্ষেত্রেই পৌরাণিক কাহিনী ঘটনাগুলিকে ঐতিহাসিকভাবে ভিত্তিহীন বলে অনেক অভিমত দিয়ে থাকেন । তা সত্ত্বেও বর্তমান কালে মানব সংস্কৃতি ও ধর্মের ইতিহাসে এসব পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ গুলোর বিশেষ গুরুত্ব অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন ।
মূর্খ কালিদাস গাছের ডাল কাটছে |
১) সত্য ঐতিহাসিক উপাদান : পৌরাণিক কাহিনী গুলিতে অতীত ইতিহাসের বহু সত্য ও যথার্থ উপাদান লুকিয়ে থাকে । প্রাচীন গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনী গুলিকে তাদের দেবতা , পূর্বপুরুষ এবং বীরপুরুষ এর গল্প বলে মনে করা হয় । জে .এফ . বিয়ারলেইন মনে করেন যে , মিথ বা পৌরাণিক কাহিনীগুলি হল গল্পের আকারে ( কোন মানব সংস্কৃতির ) সত্য ঘটনার প্রকাশ । প্রাচীন গ্রিসের পৌরাণিক কাহিনীর সূত্রর ধরেই আধুনিক কালে ক্রয়়় নগরী ও ট্রু এর যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করাাা সম্ভব হয়েছে ।
২) সময়কাল নির্ণয় : পৌরাণিক কাহিনীগুলির সঙ্গে তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের বহু সাল তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয় ।
৩) বংশ লতিকা : পুরান গুলি থেকে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রাজবংশের বংশ লতিকা জানা যায় । প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন পুরানে বহু প্রাচীন রাজবংশের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায় । পুরানে উল্লেখিত সকল ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ডঃ , রণবীর চক্রবর্তী মনে করেন যে , পুরানে বর্ণিত রাজবংশ গুলির অস্তিত্বের বেশিরভাগই স্বীকৃতি সত্য ।
৪) ধারাবাহিকতা : পৌরাণিক কাহিনীগুলি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে । বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে প্রাচীন মানব সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প বহু যুগ অতিক্রম করে বর্তমান কালেও প্রচলিত রয়েছে , প্রাচীন সেই সংস্কৃতি থেকে যেসব আধুনিক মানব সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে তারা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয় যে ,
প্রাচীন পৌরাণিক কাহিনীর গল্পে তাদের সমাজ ও সংস্কৃতির সম্পর্কে যেসব কাহিনী প্রচারিত রয়েছে সেগুলি সত্য।
* কিংবদন্তি ( Legends )
মৌখিক ইতিহাসের একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে কিংবদন্তির কাহিনী কে গুরুত্ব দেওয়া হয় । পাশ্চাত্য জগতে প্রচলিত লেজেন্ড , আঞ্চলিক ঐতিহ্য , জনপ্রিয় এন্টিকুইটিস নামের অঙ্গিক কে বাংলায় কিংবদন্তি বলা হয় ।
(১) কিংবদন্তি কি ? : কিংবদন্তি কাহিনীগুলিতে যেসব ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয় বা যেসব চরিত্রের উল্লেখ করা হয় অতীতে এক সময় সেসব ঘটনা ঘটেছিল বা সেসব চরিত্রের জীবন্ত ছিল বলে লোক সমাজ বিশ্বাস করে থাকে । সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী গণ মনে করেন যে ,
অতীত কাল থেকে লোকসমাজে প্রচলিত কিংবদন্তি কাহিনীগুলিতে সামান্য পরিমাণে হলেও অতীতের বহু ঐতিহাসিক তথ্য ও সূত্র থাকে ।
(২) কিংবদন্তের উদ্ভব :
অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে , মানুষ সামাজিক বিবর্তনের অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর কিংবদন্তি কাহিনীর সৃষ্টি শুরু হয়েছে । পৌরাণিক গল্প কাহিনী সৃষ্টি হওয়ার পরবর্তীকালে মানব সমাজে যখন কিছু কিছু ইতিহাসবোধ জেগে উঠতে শুরু করে তখনই কিংবদন্তের পথ চলা শুরু হয় ।
∆ কিংবদন্তির বৈশিষ্ট্য :
১) বিষয়বস্তু : কিংবদন্তির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । ইতিহাস নির্ভর কাহিনী , প্রেম বিরহ সম্পর্কিত কাহিনী , আধ্যাত্মিক ঘটনা , পরি বা ভূত-প্রেত এর কাহিনী , সন্ন্যাসী ফকির পীর দরবেশের কাহিনী ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ঘটনা কিংবদন্তির বিষয়বস্তু হয়ে থাকে ।
২) চরিত্রের অস্তিত্ব :
কিংবদন্তির ঘটনাবলীর সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক সভ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকলেও একথা সাধারণভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে , কিংবদন্তির চরিত্রগুলি অতীতকালে একসময় জীবিত ছিলেন ।
* কিংবদন্তির উদাহরণ :
(১) গোপাল ভাঁড়ের কাহিনী :
বাংলায় রামচন্দ্র রাজার রাজসভার হাস্যরসিক গোপাল ভার সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী বাংলায় প্রচলিত রয়েছে । বিভিন্ন কাহিনীতে গোপাল ভাঁড়ের অসামান্য বুদ্ধিমত্তা , রাজা এবং রাজ পরিবারের সভা শব্দের বারংবার বুদ্ধিতে পরাজিত করা , হাস্যরস সৃষ্টির প্রভৃতি ফুটে উঠেছে ।
নদীয়া জেলার কৃষ্ণন গরের ঘূর্ণির বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত গোপাল ভাঁড়ের বিভিন্ন কাহিনীতে কিছু কিছু যথার্থ ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় ।
* পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তির পার্থক্য ?
উঃ) পৌরাণিক কাহিনী ও কিংবদন্তির কাহিনীর মধ্যে সর্বদা সুস্পষ্ট পার্থক্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় । তবে সাধারণভাবে উভয়ের মধ্যে দুই একটি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় যেমন,
কিংবদন্তি
১) কিংবদন্তির কাহিনীতে মানুষের কর্মকান্ড ও শক্তির ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় । মানুষই হলো কিংবদন্তি কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র । এক অসামান্য ব্যক্তি চরিত্র এবং তার কার্যাবলী কিংবদন্তির বিষয়বস্তু ।
২) অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিংবদন্তির কাহিনীগুলির একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ভিত্তি থাকে । কোন না কোন সমাজ , সভ্যতা ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই কিংবদন্তি কাহিনীগুলি গড়ে ওঠে ।
৩) সম্পূর্ণ যথার্থ না হলেও বর্তমান সময়ের ভিত্তিতে কিংবদন্তির ঘটনাগুলির একটি আনুমানিক কালপুঞ্জি থাকে ।
পৌরাণিক কাহিনী
১) পৌরাণিক কাহিনীতে ঈশ্বরের কর্মকাণ্ড ও শক্তির উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয় । এই কাহিনীগুলিতে অলৌকিক জগতের ঈশ্বরই মূল নায়ক নায়িকা ।
২) পৌরাণিক কাহিনীগুলি সাধারণত ধর্মভিত্তিক হয় । পৃথিবী কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল বা কিভাবে কোন প্রোগ্রামিং প্রথার উদ্ভব ঘটেছিল এই ধরনের বিষয়গুলি প্রধানত পৌরাণিক কাহিনীতে আলোচিত হয় ।
৩) বর্তমান সময়ের ভিত্তিতে পৌরাণিক কাহিনীর কোন ধারাবাহিক কালপঞ্জি থাকে না । পৌরাণিক কাহিনী গুলির একটি নিজস্ব কালপঞ্জি থাকে ।
* লোক কথা:
লোক কথা হলো এক ধরনের কাল্পনিক গল্পকথা এবং এক ধরনের ঐতিহ্যবাদী লৌকিক সাহিত্য যার সাহায্যে প্রাকৃতিক বা আধ্যাত্মিক কোন ঘটনার ব্যাখ্যা বা উপলব্ধির চেষ্টা করা হয় । এই কাহিনীগুলি কোন অতীত বা ঐতিহাসিক ঘটনার অনুকরণে সৃষ্টি হতে পারে । লোক কথার কাহিনীগুলির উদ্ভব কাল সম্পর্ক সঠিকভাবে কিছুই জানা যায় না । তবে গবেষণাগণও অনুমান করেন যে ,
বিভিন্ন দেশের লোক কথার কাহিনীগুলির উৎপত্তি হয়েছে সভ্যতার বিকাশের আদি লগ্নে এবং বিভিন্ন সমাজ বা সংস্কৃতির মৌখিক ঐতিহ্য থেকে । অতীতকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে । ভারতে প্রায় হাজার বছর আগে রচিত নারায়ন পন্ডিতের
' হিতোপদেশ ' , খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে বিষ্ণু শর্মা রচিত পঞ্চতন্ত্র , এবং খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত জাতক কাহিনী লোক কথার অন্যতম নির্দেশক । উনিশ শতকের ইউরোপের বিভিন্ন লোক কথার কাহিনীগুলি সংগ্রহ করে গবেষণ গন লিখিত বইয়ের আকারে প্রকাশ করতে শুরু করেন ।
ডেনমার্কের হান্স ক্রিশ্চিয়ান আন্ডার সন , জার্মানির জ্যাকব প্রমুখ লোক কথার অন্যতম জনপ্রিয় গল্পকার ছিলেন ।
* লোক কথার সংজ্ঞা :
বিভিন্ন দৃষ্টি কোণ থেকে লোক কথার সংজ্ঞা দেওয়া যায় , যেমন —
(১) জীবন ও কল্পনার সংমিশ্রণ : কাল টম লিনশন ও লাঞ্চ ব্রাউন এর মতে , মানুষের জীবনে কল্পনার সংমিশ্রণে যেসব গল্পকথা গড়ে উঠেছে তাই হল লোককথা ।
এসব গল্প গাথা যুগের পর যুগ ধরে বংশ-পরম্পরায় প্রচলিত হয়ে আসছে এসব গল্প কাহিনীগুলি সেই সমাজ বা সভ্যতার ঐতিহ্যবাদী সাহিত্য যা প্রাকৃতিক ও অধ্যান্তিক জগতকে বোঝা ও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে ।
Post a Comment